লেখক-সাজ্জাদ হোসেন সাখাওয়াত
বাড়ীর উঠানে অনেক ফুল ফুটেছে। অপলকে আমি তাকিয়ে
ফুলের দৃশ্য দেখি।হঠাৎ শিমুল বলে" তাকিয়ে আর কি লাভ
কাল ঝরে পড়ে সৌন্দর্যরূপ নষ্ট হয়ে যাবে"।আমার মনে হলো
আমিও ঝরা ফুলের মতো,কত না সুন্দর ছিল জীবনের চলার
পথের
সময়।
-
মনে পড়ে রাজধানীর কোন সস্তা হোটেলে উন্নত খাবারের
কথা।আমি, সুনীল, নিতাই, বাবু চায়ের টেবিলে মজার গল্পের
জড তুলার কথা।বাবু বলতো, তুই আর কত লেখবি গল্প-কবিতা
এবার বন্ধ কর।নিতাই সবসময় ছিল বাস্তবিক, শুধু ভাবতো কি
করে রজনী চালাবে। সুশীল ছিল লটারি প্রিয় ভাগ্যর উপর
ছেড়ে দিতো জীবনের লক্ষ। সবাই মিলে বসলে ঘড়ির কাটা
আমাদের রেখে চলে যায়।দিরাম ওয়েটার প্রতিদিন খাবার
সার্ফ করতো।দিনেদিনে দিরাম কাকা আমাদের পরিচিত হয়ে
গেল।
-
আজ এই ক্লান্ত বিকালে মনে পড়ে সুশীলের কথা।সেই বলে
ছিল,তোর লেখা কখন প্রকাশ হবে?আমরা পড়তে পারিনা।
জানিস আমার শখ তোর লেখা একটি বই আমার কাছে রাখতে।
যখন তোদের মনে পড়বে তখন পড়বো।
-
লেখা আজ প্রকাশ হলো কিন্তু সুশীল আজ লন্ডনে ।শুনছি সে
নিস্তব্ধ পথের যাত্রী। খাওয়া -দাওয়া বন্ধ প্রায়।নিঃশ্চুপ
থাকে প্রায় সবসময়।লিভার নষ্ট হয়ে গেছে হয় তো নিতাই
মতো চলে যাবে না ফেরার দেশে।
--
নিতাই আমার বাসায় এসে ছিল কয়েক বছর আগে।বিকালে
চায়ের কাপে আড্ডা বসে আমার বাড়ীর ছাদে ।আমার
দিকে ছেয়ে পেল পেল করে কাঁদতে শুরু করে। আমি বলি
বোকার মতো এমন করছ কেন। নিতাই বলে,বড়দা, মেজদা
মরেছে ডিসেম্বর মাসে ।তাই ডিসেম্বর মাসকে ভয় লাগে ।
আমি বলি
ভগবান তোঁদের কি একই দিন সৃষ্টি করেছে, বোকার মতো সব
কিছু। নিতাই বলে তুবও প্রতিনিয়ত ভয় করে দোস্ত।
-
কয়েকমাস হলো পরলোকগত হল নিতাই। মার্চ মাসে মৃত্যুর
টিকেট কাটল।নিতাই কত না বাসনা ছিলো, এবার সুনীল দেশে
ফিরলে আবার সবাই মিলে রাজধানী ঐ রেস্তোরাঁ আড্ডা
দিবে, দরকার হলে দিরাম কাকা কে নিয়ে আসবে।দিরাম
কাকা আজ হয়তো বৃদ্ধ হয়ে গেছে। সেও আজ হয়তো পাঞ্জা
লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে।
-
বাবু হারিয়ে গেছে অনেক আগে।পৃথিবীর অভাবের দরিয়া
তাকে হার মানিয়ে দিলো। বি,কম পাশ করে ছুরালী উচ্চ
বিদ্যালয় শিক্ষাগত পেশা যোগ দেয়।প্রথম দিকে আসতো এর
পরে আর আসে না।
--
হঠাৎ একদিন নিতাই আর সুনীল বলে উঠলো, চল সবাই মিলে
বাবুর গাঁয়ে ঘুরে আসি।আমি না করলাম না।তিনজনে একটি
টেক্সি করে যাত্রা শুরু করি। সুশীল আগের মতো সিকেরেট
টানে নিতাই খালি কন্ঠে গান ধরে।
-
আমরা গিয়ে জানতে পারি বাবু মাষ্টার নামে কেউ এই গাঁয়ে
থাকেনা।হতাশা নিয়ে চলে আসার সময় দিরাম কাকার সাথে
দেখা,আমার কন্ঠ শুনে বলে উঠে,"কে কবি না কি?"আমরা
দিরাম কাকা কে ছিনতেছি না।চুল সব বকের মতো সাদা হয়ে
গেছে।বড় একটি চশমা চোখে ঝাপসা দেখে, আমার কন্ঠ শুনে
বলে দিয়েছে আমার নাম।
-
সুনীল বলে দিরাম কাকা বাবু কোথায় জানেন। দিরাম কাকা
বলে, বাবু কে কাবু করেছে সমাজ।নিতাই বলে সব খুলে বলেন
কাকা,শুন তাহলে। বিদ্যালয় ক্লাস করার মতো কিছু নাই।
উপজেলা T U N O সাথে দেখা করে বাবু। সবাই মিলে বসে
সিদ্ধান্ত নেয়, গ্রাম থেকে চাঁদা তুলে বিদ্যালয় কার্যকর্ম
চালাবে। বাবু মাষ্টার চাঁদা তুলার দায়িত্ব পায়।প্রচুর চাঁদা
উঠে,গাঁয়ের বধূ কন্যারা হাতে বালা বিক্রম করে চাঁদা
দিয়েছে।সব চাঁদা টাকার প্রধান শিক্ষক কে দিয়ে দেয় বাবু
মাষ্টার। সব ঠিকঠাক যাচ্ছিল।
-
হঠাৎ গাঁয়ে একদিন ভোরে স্বর উঠে,সবাই তড়িৎ গতিতে ছুটে
চলে বাবু মাষ্টারের ঘরে ।তার গৃহে এক সুন্দরী রমনীর লাশ
পাওয়া গেছে। গ্রামের অামজনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, প্রধান
শিক্ষক কৌশলে বাবু মাষ্টার কে গ্রাম পালাতে সাহায্য
করে।বলতে বলতে কেঁদে দিলো দিরাম কাকা , হতছড়া সেই যে
গেল আর
একবার আসে নাই। বাবু মাষ্টার চলে যাওয়ার পরে আবার
স্কুলে অনিয়ম শুরু।বুঝতে বাকি নেই কারা এক কাজ করেছে।
গাঁয়ের ছেলেরা মদের আড্ডায় পরিণতি করেছে বাবু
মাষ্টারে
ঘরটাকে।
-
দুঃখ ভারাক্রান্ত র্হদয়ে আমরা চলে আসি।যাচ্ছিল সময়
সুনীল আবার বিদেশে পাড়িদেয়, নিতাই চলে যায়
কর্মক্ষেত্র। একদিন মাগরিবের নামাযের সময় বাসায়
কোলিং বেলে টিং টিং শব্দ করে। নামায পড়ে দেরী হয়ে
যাওয়া দরজার সামনে কাউকে দেখি নাই। দরজার এককোণে
নতুন একটি চিঠি পাই।চিড়ে দেখি ভিতরে আরেকটি খামে
বছর দশেক আগের হবে এমন একটি চিঠি। প্রথম চিঠি লেখেছে
পোষ্ট মাষ্টার,/
জনাব সালাম নিবেন
এই চিঠি এসেছিল প্রায় দশ বছর আগে কিন্তু কোন
অসাবধানতার কারনে আপনার নিকট চিঠি পৌঁছাতে পারি
নাই তাই আমরা অান্তরিক দুঃখিত। আজ পুরাতন আলমারি
পরিষ্কার করার সময় আপনার চিঠি আমাদের হাতে পাই এবং
আপনার নিকট পাঠাই।
---
------------
বুঝতে পারলাম চিঠি অনেক আগের ।খুলে দেখি প্রেরক বাবু
মাষ্টার
আমার চোখে অশ্রু ঝরছে তখনি যখন বাাবুর লেখা চিঠি
দেখি, ,,বাবু লেখেছে:
---
দোস্ত পৃথিবীর উপরে হয়তো সময় বেশি নাই।কারন ডাক্তার
মশাই নিষ্ঠুর কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছে তিন মাসের মাঝে
বিদায় নিতে হবে।বড্ড মিস করি ত্রিপুরা দাতব্য হাসপাতের
১০৪ নাম্বার কেবিনে শুয়ে।তোদের মনে পড়ে প্রতিটি
নিঃশ্বাসে।যদি চিঠি হাতে যায় সুনীল আর নিতাই কে নিয়ে
চলে আসিস।যাওয়ার আগে তোদের শেষ দেখা দেখতে চায়
মন।এই দাতব্য হাসপাতালে হয়তো রাজধানী সেই রেস্তরাঁ
মতো পরিবেশ নাই তাতে কি আমরা বন্ধুরা যেখানে যাই
সেখানে তো রেস্তরাঁ তৈরিহয়।আসবি আসা করি,সুনীল আর
নিতাই কে মনে করে বলে নিয়ে আসিস।আমি তোদের দেখার
অপেক্ষা আছি,আবার সেই রাত্রিচরী হবো।
ইতি:-(বাবু)
--
ঐদিন সন্ধ্যায় কেঁদেছি অনেক চিৎকার করে কেঁদেছি, ইচ্ছে
মতো অশ্র ঝরালাম দুই নয়নে।আমার কাছ থেকে এইভাবে ঝরে
গেলো সব কোমল মনের মানুষেরা ।বাড়ীর উঠানের ফুল গুলা
হয় তো ঝরে পড়বে গভীররাত্রিতে ।যদি একটা ফুল থেকে যায়
তখন সে বুঝবে আমার এই অন্তঃ দহনের আত্মনাদ ।মসজিদের
মাইকে আযান এশার শুনা যাচ্ছে, অযু করে নামায পড়ব।এর
পরে আবার ভাববো দুষ্ট বন্ধুদের।