Friday, January 6, 2017

উজানভাটির মেয়ে


কবি-সাজ্জাদ হোসেন
নিস্তব্ধ মৌলভী বাড়ী 
আজ হেতা ছেড়ে তিপ্তি দিচ্ছে 
স্বামীর বাড়ী পাড়ি।। 
শত কল্পনার রাজ্য 
করে তার বিদায়ী লগনে 
হা হা কার 
মানুষ গুলা কেমন জানি স্বার্থপর। 
নব্য রাজ্য, সে রাজরানী 
নতুন করে গড়ে তুলবে 
রাজ্যর নতুন কাহিনী, 
কিন্তু এই কি হল? 
রাজ্যর সবাই রাজা 
কেউ শুনেনা কারো কথা 
সবার আদেশে হয় সাজা 
কিন্তু তিপ্তির কি হল? 
তিপ্তির মন আজ অদৃশ্য 
নেই আগের মত হাসি 
বলেনা মুক্ত পাখির মতো কথা 
অপলকে তাকিয়ে রয়। 
নিজের সাথে নিজে 
অন্যর সাথে কথা নয় 
দেখতে লাগে আনমনা 
ভাবতে থাকে কখন কি হয়।। 
স্মৃতি মনে পড়ে হেতা 
মৌলভী বাড়ী করে যথা 
নিজে নিজে হাসে 
কেউ নাই এই পরিবারের পাশে।।
মৌলভী বাড়ীর পাশে 
শুনা যেতো বাঁশির সুর 
আজ সব স্মৃতি 
সে সুর আজ বহুদূর। । 
মক্তবে ওস্তাদজী ছেলের 
দিকে অপলকে দেখা 
এই সব আজ 
স্মৃতি সাগরের আঁকা ।।
স্বামী প্রবাসে দিল্ পাড়ি 
তুচ্ছ আমার জীবন ছাড়ি 
মাস বছর চলে গেল 
খবর আমার নাই নিল।। 
একান্নবর্তী সংসাররূপ 
কাজে তিপ্তির মূল ধর্ম 
কে শুনে কার কথা 
কেউ বুঝেনা তিপ্তির মর্ম।। 
শাশুড়ি তাঁহার রাজ রাণী 
নন্দিনী করে কৃতী কাহিনী 
চলছে দুঃখের বেলা 
কাটছে সময় তিপ্তির একলা।। 
দিবা-নিশি সে ক্লান্ত 
দেহমন নাই শান্ত 
মাস বছর চলে গেল 
বাপের বাড়ীর খবর নাই এলো। 
নন্দিনী এসে শুধাইল 
বাপের বাড়ী অতিথি অাগমন 
খুশিতে আমি দিশেহারা 
চিৎকার করে বলি কে,কারা? 
বাড়ীর দরজা মুয়াজ্জিনের ধ্বনি 
বাজান ফাটালো বুঝি !জানি! 
শাশুড়ি কাছে আরতি করি 
মর্জি করে যেন ছুটি। । 
শাশুড়ি অনুমতিক্রমে 
 ক্ষেতের আই ধরে 
চলি ফেনী নদীর নাই মাঝি 
সাঁতার দিয়ে দিব পাড়ি 
জীবন রাখবো বাজি। । 
বাপের বাড়ীর দৃশ্য দেখে 
হই দিশেহারা বাজান, ভাবি, 
ভাই কে কোথায় তোরা? 
সবার নয়ন অশ্রু সিক্ত 
নাই কারে মুখে হাসি বাজান 
আমার মৃত্যু লগনে আমি 
বাজান রে ভালবাসি।
আমার সম্মুখে বাজান দিল 
অজানা দেশে পাড়ি কেন চলে গেলে? 
তোমার আয়না কে ছাড়ি। 
কয়েক দিন হল বাজান আমার 
গত কল্পনায় মনে উঠে 
বাজানের স্মৃতি শত।। 
ওপার থেকে কোন নেই তেমন 
সাড়া ভাবি সাহেবরা মনে 
হয় করতে চায় তাড়া। । 
বাজান ছাড়া এই বাড়ী শূন্য 
খনে খনে কেঁদে উঠে মন বাজানের জন্য।। 
কন্যা হয়ে জন্ম নাই 
কোথাও সুখ 
মুছে যেতে চলছে যৌবন 
ভেসে উঠছে সব দুখ।। 
বাড়ীর বাহিরে খোলা 
বিক্রেতার দিল ডাক 
বলে উঠে পোড়া কোপালি 
শাশুড়ি যে তোর রাগ।।
যেমনে পারছ স্বামীর বাড়ী যা চলে 
শাশুড়ি তোর অনেক খারাপ 
গাল মন্দ দিবে বলে।। 
ঠিক আছে যাবো 
শাশুড়ি বাড়ীর তরে 
শেষমুহুর্ত বাজানের স্মৃতি 
রেখে গেলাম অাপন ঘরে।। 
বাপের বাড়ী থেকে বিদায়কালে 
ঐ স্মৃতি পড়ে মনে 
বাজান আমার জীবিত থাকলে 
বিদায় দিতো এই লগনে।।
দীঘির পাড়ে বাজান ঘুমাও 
আমি যাচ্ছি স্বামী বাড়ী চলি 
বাজান গো আমার মাথায় 
হাত রেখে দাওনা কিছু বলি।। 
বাজান আমার একেবারে চুপ 
অজানা দেশ থেকে অপলকে দেখে! 
হে আল্লাহ, দয়াময় বাজানের কবর 
জান্নাতের টিকেট দাও এঁকে। 
কেঁদে কেঁদে স্বামী বাড়ী 
বাপের দেশ দিই ছাড়ি 
শাশুড়ি রাজ্য দিই পাড়ি।। 
দুঃখের দিন চলে যায় আমার 
ঘরে রাজ পুত্র জন্মনিল 
কেউ নাই পাশে 
পুত্র আমার দিকে ছেয়ে 
একটু একটু হাসে। 
পুত্র দিকে ছেয়ে নতুন 
পৃথিবী বয় 
এই পুত্র আমার দুঃখ খুলা 
করবে বোধহয় জয়।।
পুত্র আমার ইস্কুলে যায় 
শিক্ষক মহাদয় ভালো পায় 
হেতা সবার সমান তূল্য 
পুত্র কে করেনা অমূল্য। । 
বিদ্যা পীঠ থেকে এসে শুধাইল 
বন্ধু,শিক্ষক সবার গুন গাইল। 
এতসব শুনে 
খুশিতে ছন্নছাড়া 
প্রণাম কর দাদি কে! 
না হয় করবে তাড়া।
সর্বত পুত্র আমার 
করে ভালো ফলাফল 
তা শুনে খুশিতে 
চোখে আসে জল।। 
পুত্র আমার শহরে পড়তে 
যায় তাই ভাবিয়া দুঃখ 
আমার চলে যায় 
কিন্তু ক্ষণেক্ষণে কেঁদে 
উঠে মন আমার দোয়া 
আছে সারাক্ষণ। । 
কত ক্লান্তি লগ্ন দিলাম পাড়ি 
যৌবন সুখ শান্তি ছাড়ি এবার 
হয়তো একটু সুখের দিন 
মুছে যাবে অতীত সব বীণ । 
কিন্তু নিবুনিবু সুখের প্রদীপ 
আর জ্বলে নাই অকাল মৃত্যু 
হল নারীর এই পৃথিবীর মায়া ছাড়ি

No comments:

Post a Comment