কবি-সামিয়া শ্রাবণ
কালো শার্ট পরে বের হয়েছি--লাঠিতে ভর দিয়ে।
উদ্দেশ্য---৬৫ বছরের পুরোনো ব্রীজ--!
কপালের সামনের চুল খেয়ে গেছে বার্ধক্যের পোকারা।
চৌত্রিশ বছর আগেকার কথা--
তখন আমি সদ্য একুশ পেরুলাম।
মেয়েটা শ্রেয়া।
একরকম বিক্ষুব্ধ হয়েই লক্ষ্য সুস্হির করেছিলাম--যেন তাকেই আমার চাই।
পেয়েছিলামও--কিন্তু.......!
তারপর এই কিন্তুর অবশিষ্টাংশের কোন উত্তর নেই।
তখন বিংশ শতাব্দীর যুগ। তখনকার আধুনিক মানুষেরা পর্যায়ক্রমিক
ভালোবাসা রপ্তের কৌশলকে প্রেম বলতো।
আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না --
তবে বিশেষত্ত্ব হলো--"ভালো" কথাটির আবডালে মন্দকে
গুছিয়ে রাখার এক অদ্ভুত পৈশাচিক দক্ষতা এবং আনন্দ ছিল আমার!
বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার বিপরীতে একজনকে দাঁড় করালে
কেউ-কেউ আমার কথা বলতো।
এলাকায় আদর্শের আদলে আমার নাম ডাকা হতো তখন।
মেয়েটা শেয়া---অতিমাত্রায় সংবেদনশীল--
আর, আমার অভ্যাসী মস্তিষ্ক।
শেষবেলায় প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম,
গোটা সমাজ পারেনি --অথচ, বোকাসোকা মেয়েটা এতোটা বুদ্ধিদীপ্ত তেজস্বিতায়
আমাকে আবিষ্কার করে রেখে গেছিলো!
আমার অভ্যাস আর স্বভাব আবিষ্কারের অপমানে আরেকবার বিক্ষুব্ধ হয়েছিলাম সেবার।
তারপর থেকে শ্রেয়ার সামনে যেতে পারিনি!
জানিনা, লজ্জায়--নাকি অপমানে--নাকি ক্ষোভে!
আমাকে দায়িত্বহীনতার বলতো মেয়েটা।
বেচারা জানতো না,আমি মনুষ্যত্বহীন ছিলাম।
তারপর--কত বছর গেছে--কত যুগ!
আবিষ্কৃত চেহারা মানুষ ভুলে গেছে।
আদর্শ না হোক --অন্তত পুনরায় সমাদৃত হতে বেগও পেতে হয়নি!
রমণীচক্রের ধারাবদলে সংসার পেয়েছি --সাথে অভ্যেসটাও!
বেলা শেষে তেমন কিছু আর মনে নেই...
তবে, ভাগ্যহীনতার কষ্টটা চৌত্রিশ বছর ধরে বুঝতে দেইনি।
নিজের অস্পৃশ্য প্রতিবিম্বকে যে ভালোবাসা ভেবে পূজা করতো
তার সামনে দাঁড়াবার সাহস আসলে আমার ছিলনা!
কালো শার্ট পরে বের হয়েছি।
লাঠিতে ভর দিয়ে--উদ্দেশ্য --৬৫ বছরের পুরোনো ব্রীজ।
কপালের সামনের চুল খেয়ে গেছে বার্ধক্যের পোকা।
আজ থেকে চৌত্রিশ বছর আগে আমরা ব্রীজের বিপরীত দু'ধার ধরে হেঁটেছিলাম দু'জনা।
বৃদ্ধ এবারে নিঃশব্দে চোখ মুছলো।
আজ থেকে চৌত্রিশ বছর আগে এক রমণী একদিন নিঃশব্দে চোখ মুছে গেছিলো এখানে.....!