Saturday, May 27, 2017

উদ্দেশ্য-৬৫ বছরের পুরোনো ব্রীজ

কবি-সামিয়া শ্রাবণ
কালো শার্ট পরে বের হয়েছি--লাঠিতে ভর দিয়ে। 
উদ্দেশ্য---৬৫ বছরের পুরোনো ব্রীজ--! 
কপালের সামনের চুল খেয়ে গেছে বার্ধক্যের পোকারা। 
 চৌত্রিশ বছর আগেকার কথা-- 
তখন আমি সদ্য একুশ পেরুলাম। মেয়েটা শ্রেয়া। 
একরকম বিক্ষুব্ধ হয়েই লক্ষ্য সুস্হির করেছিলাম--যেন তাকেই আমার চাই। 
পেয়েছিলামও--কিন্তু.......! 
তারপর এই কিন্তুর অবশিষ্টাংশের কোন উত্তর নেই। 
তখন বিংশ শতাব্দীর যুগ। তখনকার আধুনিক মানুষেরা পর্যায়ক্রমিক 
ভালোবাসা রপ্তের কৌশলকে প্রেম বলতো। 
আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না --
তবে বিশেষত্ত্ব হলো--"ভালো" কথাটির আবডালে মন্দকে 
গুছিয়ে রাখার এক অদ্ভুত পৈশাচিক দক্ষতা এবং আনন্দ ছিল আমার! 
বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার বিপরীতে একজনকে দাঁড় করালে 
কেউ-কেউ আমার কথা বলতো। 
এলাকায় আদর্শের আদলে আমার নাম ডাকা হতো তখন। 
 মেয়েটা শেয়া---অতিমাত্রায় সংবেদনশীল-- 
আর, আমার অভ্যাসী মস্তিষ্ক। শেষবেলায় প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম, 
গোটা সমাজ পারেনি --অথচ, বোকাসোকা মেয়েটা এতোটা বুদ্ধিদীপ্ত তেজস্বিতায় 
আমাকে আবিষ্কার করে রেখে গেছিলো! 
আমার অভ্যাস আর স্বভাব আবিষ্কারের অপমানে আরেকবার বিক্ষুব্ধ হয়েছিলাম সেবার। 
তারপর থেকে শ্রেয়ার সামনে যেতে পারিনি! 
জানিনা, লজ্জায়--নাকি অপমানে--নাকি ক্ষোভে! 
 আমাকে দায়িত্বহীনতার বলতো মেয়েটা। 
বেচারা জানতো না,আমি মনুষ্যত্বহীন ছিলাম। 
তারপর--কত বছর গেছে--কত যুগ! 
আবিষ্কৃত চেহারা মানুষ ভুলে গেছে। 
আদর্শ না হোক --অন্তত পুনরায় সমাদৃত হতে বেগও পেতে হয়নি! 
রমণীচক্রের ধারাবদলে সংসার পেয়েছি --সাথে অভ্যেসটাও! 
বেলা শেষে তেমন কিছু আর মনে নেই... 
তবে, ভাগ্যহীনতার কষ্টটা চৌত্রিশ বছর ধরে বুঝতে দেইনি। 
নিজের অস্পৃশ্য প্রতিবিম্বকে যে ভালোবাসা ভেবে পূজা করতো 
তার সামনে দাঁড়াবার সাহস আসলে আমার ছিলনা! 
কালো শার্ট পরে বের হয়েছি। 
লাঠিতে ভর দিয়ে--উদ্দেশ্য --৬৫ বছরের পুরোনো ব্রীজ। 
কপালের সামনের চুল খেয়ে গেছে বার্ধক্যের পোকা। 
আজ থেকে চৌত্রিশ বছর আগে আমরা ব্রীজের বিপরীত দু'ধার ধরে হেঁটেছিলাম দু'জনা। 
 বৃদ্ধ এবারে নিঃশব্দে চোখ মুছলো। 
আজ থেকে চৌত্রিশ বছর আগে এক রমণী একদিন নিঃশব্দে চোখ মুছে গেছিলো এখানে.....!

Thursday, May 25, 2017

ওস্তাদের কদর

কবি-মাইনুদ্দিন আল আতিক
হানিফা নামের বালক ছেলে পড়তো মাদরাসাতে, 
ইলেমের পিপাসায় ছুটতো সে প্রতিদিন প্রভাতে। 
একদা শীতের সকালবেলা শিশির ভেজা ঘাসে, 
খালি পায়ে রওয়ানা হলো মাদরাসার অভিলাষে। 
ওস্তাদ দেখলেন হানিফা আজ এসেছে খালি পায়ে, 
শিশিরকনা ঝরছে তার চরণ যুগল বেয়ে। 
কাছে ডেকে শুধান, বাছা জুতা নাই কেনো পায়, 
তোমায় কি জুতা কিনে দেয়নি তোমার বাবায়? 
আমাদের পরিবার অসহায় অতি বাবা নাই যে বেঁচে, 
জুতা কেনার টাকা আমি পাবো কার কাছে। 
এ কথা শুনে ভাবলেন ওস্তাদ আমার তো ঢের জুতা, 
এক জোড়া দিলে হানিফাকে যাবেনাকো বৃথা। 
ওস্তাদ উঠে গেলেন রুমে; এসে খানিক বাদে, 
হানিফার হাতে তুলে দিলেন জুতা মনের খোশামোদে। 
পথে যেতে যেতে ভাবলো হানিফা কি করবো হায়, 
কি করে লাগাই এ জুতা চরণে যা ছিলো ওস্তাদের পায়। 
জুতা জোড়া কাপড়ের তৈরি টুপি বানালে কেমন হয়! 
গরম পানিতে সিদ্ধ করে কাপড় খুলে লয়। 
দর্জির কাছে ছুটলো এবার; বললো কাছে গিয়ে, 
আমায় একটি টুপি বানিয়ে দিন এই কাপড় টুকরো দিয়ে। 
পর প্রভাতে আবারও হানিফা দৈনিক রুটিন মতে, 
টুপিখানা মাথায় দিয়ে গেলো মাদরাসাতে। 
ওস্তাদ দেখলেন আজও হানিফা এসেছে খালি পায়ে, 
রাগ মহারাজ তাড়া করলো ওস্তাদজীর গায়ে। 
ডেকে পাঠালেন হানিফাকে তাঁর নির্জন রুমে, 
জিজ্ঞাসেন ক্রোধে জুতা কোথায়? চোখ রাঙিয়ে ক্রমে। 
হানিফা শুধু নির্বাক হয়ে মিটিমিটি হাসে, 
অগ্নিশর্মা হয়ে ওস্তাদ বেত নিয়ে আসে। 
হানিফা এবার খুললো মুখ; শুনেন ওস্তাদজী, 
বারেক তাকান মাথার দিকে, দেখেন তো দিয়েছি কি? 
ওস্তাদ দেখলেন শিষ্যের মাথায় জুতার কাপড়ের টুপি, 
যে জুতা কাল দিয়েছিলেন তিনি নেননি কোনো রুপি। 
অবাক হয়ে বললেন ওস্তাদ জুতার কাপড় কেনো মাথায়, 
কিভাবে লাগাবো সে জুতা চরণে যা ছিলো আপনার পায়। 
এ কথা শুনে ওস্তাদজীর চোখ বেয়ে পরলো জল, 
কে শিখালো তোরে এ শিষ্টাচার আমায় একবার বল? 
মায়ের কাছে শিখেছি গুরু এতটুকু জ্ঞান, 
কোনোদিন ধন্য হওয়া যায়না করলে ওস্তাদের অসম্মান। 
ওস্তাদ এবার জড়িয়ে ধরে দোয়া করলেন তায়, 
হানিফাকে তুমি অমর করো ওগো দয়াময়। 
ওস্তাদের দোয়া যায়নি বিফলে কবুল হলো উক্ত, 
সেই বালক হলো শেষে শ্রেষ্ঠ ইমামের তালিকাভুক্ত। 
যার মাযহাব আমাদের মাঝে সর্বাধিক পরিচিত, 
সবাই জানি তার নাম হানাফী মাযহাবী যত।

Wednesday, May 24, 2017

উপলব্ধি

মোহাম্মদ অংকন
বৃষ্টিতে ভিজেছ আজ; দেখেনি তো কেহ? 
ভেজা চুলে মৃদুমন্দ বাতাসের খেলা 
বইয়ে পড়েছে জল। ভাংগা জানালা 
পটে আমি চেয়ে দেখেছি তোমার দেহ। 
স্নিগ্ধ কদমফুলে জলের কান্নাস্নেহ 
লুটিয়ে পড়ে তোমার দুপদে নিরালা, 
ফিরে পেয়েছ তবে যেন কৈশর বেলা 
আমার চোখে রোদ শুকিয়েছে মধ্যাহ্ন। 
 নেত্রদর্পে দেখেছি তোমার ভেজা রুপ 
লেগেছে নিদারুণ পূর্বের চেয়ে ভালো 
যতটুকু পেরেছি দেখেছি থেকে চুপ, 
বৃষ্টি থামতেই মৃদু নাচন পালালো 
প্রকৃতি যে স্তব্ধ! আমি একা নিঃশ্চুপ 
বৃষ্টি ভেজা মধ্যাহ্নে চোখে ঘুম হারালো।।

Tuesday, May 23, 2017

যুবক

হাবিবুর রহমান
যুবক নেশাতে নেই মজা, 
মৃত্যুকে নিস খোঁজা | 
নেশা তোর মরণ ডালা, 
তুই পরিবারের জ্বালা | 
 হতাশায় কাঁদে পরিবার, 
আদর্শে তোর হার | 
বন্ধু মহলে নেই মান, 
মদ গাজা তোর প্রাণ | 
যুবক নেশা দেবেনা মুক্তি, 
 তুই দেশের অপশক্তি | 
 যুবক তুই আজ নষ্ট, 
পরিবারকে দিলি কষ্ট | 
ফিরে আয় ভালো হবি, 
দুধে ভাতে সমাজে রবি |

মাটির বাড়ি

কবি-সামিয়া শ্রাবণ
"আমাদের একটা মাটির বাড়ি হবে, আচ্ছা? 
উপরে টিনের চাল। জানালায় থাকবে পুরোনো কাঠের শিক। 
তুমি আর আমি---সে জানালা দিয়ে মেঘলা আকাশ দেখবো। 
কোন একদিন ঘুমের ঘোরে টিনের চালে টুপটাপ শব্দ শুনে বুঝবো 
বৃষ্টি এসেছে আমাদের মাটির বাড়িতে। 
আমাদের একটা মাটির বাড়ি হবে, আচ্ছা? 
পাশের রাস্তা জুড়ে থাকবে ভেজা মাটির গন্ধ। 
কোন এক বর্ষায় আমরা সে পথ ধরে হাঁটবো--একই রাস্তায় 
তুমি হাঁটবে একধার দিয়ে আর আমি অন্যধারে---
এভাবে হাঁটতে-হাঁটতে আমরা পদ্মদীঘিতে পৌঁছুবো তারপর। 
একটা পুকুর থাকবে--যেখানে মধ্যরাতে চাঁদের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। 
বাড়ির সামনে একটা মাটির উঠোন থাকবে--
সে উঠোনের ধারে থাকবে একখানা ভাঙা চৌকি---
আমরা সে চৌকিতে বসে পূর্ণিমা দেখবো। 
অদূরে থাকবে নোংরা ডোবা -- 
যেখানে বৃষ্টি হলে ব্যাঙেদের ঘ্যাঙর- ঘ্যাঙ আওয়াজ শোনা যায়। 
ঝিঁঝিঁ পোকা আর জোনাকিরা আমাদের জানালায় ভীড় জমাবে খুব। 
বুনো বেলি ফুটে থাকবে আমাদের মাটির দেয়ালের ধারে। 
কোন এক রাতে আমার অগোছালো এলোমেলো চুলে 
সে বেলির কয়েকটা এনে গুঁজে দিবে তুমি, আচ্ছা? 
 হঠাৎ এসব কথা মনে পড়ে গেলো চল্লিশ বছর বয়স্কা রমণীর। 
তাদের বোধ হয় একটা মাটির বাড়ি হওয়ার কথা ছিল। 
কাঁচের জানালায় বৃষ্টির প্রতিচ্ছবিতে হঠাৎ গোল ফ্রেমের চশমাটা 
ঘোলাটে হয়ে আসলো তার। 
অগোছালো চুল ঠিকই আছে--শুধু ভাঙা চৌকির 
জায়গা দখল করে আছে বিলাসবহুল হেলানো চেয়ার। 
 বেলির জায়গায় সেখানের ফুলদানিতে সাজানো --কিছু বুনো অর্কিড। 
অবশেষে "তুমি" আর "আমি" মিলে তারা কখনো "আমরা" হতে পারেনি......

হারানোর বেদনা

মোহাম্মদ অংকন
একটি নয় দুটি নয় তিনটি ফুল ঝরল অকালে 
প্রভাতে ফুটে ফুল ঝরল মেঘাবর্তী বিকালে। 
মায়ের পড়ল পাথর চাপা তিন সন্তানের বিদায়ে 
দৃঢ়চেতায় বাবা ফেলে পা সন্তানের লাশ কাধে লয়ে। 
প্রথম ফুলে ভরেছিল মায়ের কোল কলমি লতার মত, 
সেই কোল খালি হতে লাগে নি সময় তিনরাতও। 
যে গেছে তো সে আর আসবে না ফিরে,এটা ভেবে 
মায়ের হৃদয়ের জলন্ত আগুন এক নিমিষেই নেভে। 
দ্বিতীয় ফুল ফুটে সংসারে এসেছিল আনন্দ অপরিমেয়, 
এক যুগ না পুর্তিতেই সেই ফুল হারাল মাতৃ স্নেহ। 
বাবার মন অল্পতেই বোঝে,মায়ের মনে সন্তানের শোক 
বিধাতার একী মহিমা!সেই মাকে দিয়েছে ধৈর্য অনেক। 
তৃতীয় ফুল জগতে এসে মায়ের মনপ্রাণ জুড়ালো, 
সংসারেতে উন্নতি,অবস্থার নানাবিধ পরির্বতন হলো। 
কিসের কি অর্থ?ষোল না পেরুতেই ধরল রোগ ক্যান্সার, 
জীবন বাচাঁতে জীবন যায়,কিসের কি সংসার। 
শত চেষ্টা হাজার প্রচেষ্টা আর নানাবিধ অর্থ ব্যয়ে, 
আরোগ্যের আশ্বাসে নয় মাস অন্তর বাড়িতে আসে নিয়ে। 
দিন না থাকিলে দিনের সন্ধান মেলে না কভু, 
কালেমা পড়িয়ে গতকাল পরজগতে নিয়ে নিয়েছে প্রভু।।

Monday, May 22, 2017

আর কত ?

মোঃ ইসমাইল হোসেন আবির
রাজন মেরেছিস স্বজন কেঁদেছে 
বাঁধ ভেঙ্গেছে জলের 
আয় দেখি তোর বুকের পাঠা 
আমিও যে তার দলের। 
আর কত মারবি রাজন 
ভাসাবি কত জলে 
দেখনা চেয়ে পাজর ভাঙ্গার 
কষ্ট কাকে বলে। 
কি ভেবেছিস, আমি মাটির প্রদিপ ? 
নিভু নিভু হয়ে জ্বলে ? 
বারে বারে এসে ভয় দেখিয়ে 
হেসে হেসে যাবি চলে। 
আমি জ্বলতে জানি, জ্বালাতে জানি 
যদি সলতেটা দেয় উস্কে 
জ্বলে পুড়ে তোকে মরতে হবে 
ছাড়তে হবে দেশকে। 
দেখেনি'ত কেউ ত্যাজ আমার 
আয় চ্যাখে নে তুই 
ক্ষোভের অনলে ভস্ম হবি 
আমি ঠোট দিয়ে আকাশ ছুঁই। 
আমার দেশে চলবেনা আর 
তোর ক্ষমতার বড়াই 
জেগে গেছে আজ আমজনতা 
গ্রামে গ্রামে সব পাড়ায়।

অনিয়ত হালচাল

মোহাম্মদ অংকন
সমূলে বদলে গেছে যুগের হাওয়া, 
এখন আর সুবিচার যায় না পাওয়া। 
পাল্টে গেছে দেশকাল-হালচাল, 
সবখানেতেই দুর্নীতি আর ভেজাল। 
যেখানে যেমন চলছে লুটতরাজ 
দুর্নীতির কালো থাবায় বিকলঙ্গ সমাজ। 
জাল টাকা আর সুদের ব্যবসা বাড়ছে, 
মাতাল হয়ে পরিবারের সদস্যকেই মারছে। 
চলছে অনিয়ম, জ্বলছে আগুন ধাও ধাও 
বলছে না কেউ সত্য কথা, "মুক্তি দাও।" 
মুখ যে সবার বন্ধ এবার, দ্বন্দপূর্ণ চারিপাশ 
কেউ দ্বন্দে আবার কেউ অদ্বন্দেই জেলে বাস। 
মানছে না আইন, আইন কে চালাবে? 
আইনজীবীই তো উস্কে দিচ্ছে কেডারকে। 
পা নেই বিপথে চলার ভয় কোনো প্রকার, 
দুর্নীতি তো চলবেই, মরবে মানুষ নির্বিকার। 
দেখবে কে? তারই যে অবৈধ চশমা 
অসহায় যে সেইতো মরবে, রাজনীতির কারিশমা। 
তেলে মাথায় তেল চলে, সমাজ হয় বাহুলতা, 
মুখবন্ধ, কলহের তাড়নায় কেউ বলে না কথা। 
এভাবে কি আর দেশ, সমাজ চলে 
আসুন সজ্জিত হই দুর্নীতি বিরোধী দলে। 
মুখ ফুটে আজ কথা বলি, জানুক সবে, 
সব অনিয়ম বিনষ্ট হবে, এদেশে তবে। 
তরুণরা আগে আসুক অরুণ হাতে 
আরেক বার দেখিয়ে দেই, আমরা ভীতু নই জাতে।।

স্বপ্ন লোকের চাবি

কবি-সুলতানা সাথী
সিমানা আবদ্ধ ছকে বাধা জিবন আমার। 
সেখানে স্বধিন থেকে ও পরাধীন। 
ইচ্ছে ঘুড়িরা আঘাত পেয়ে ফিরে আসে সিমানা প্রহরী কাছ থেকে। 
ইচ্ছে করলে ও মুক্ত আকাশে ঘুরতে পারে না।
স্বপ্ন দেখাই ছিল একমাত্র সম্ভল।
স্বপ্ন দেখতে খুব ভাল লাগতো, 
সেখানে কোনো প্রহরী নাই, 
তবুও যেনো পিপাসিত মন,
ভালোবাসার সুধা পেতে ছট ফট করে। 
বাস্তবে যেনো ভালোবাসা জোৎসনার আলোর মত হাতছানি দেয় দূর থেকে। 
হঠাৎ স্বপ্ন লোকের চাবি পেয়ে যাই আমি।
খুব ইচ্ছে আমার সেই ভালবাসার রসনা পেতে, 
তাইতো তোমার ডাকে সারা দিলাম দূর থেকে। 
কারন সিমানা প্রহরী খুব কঠোর। 
তোমার ভালোবাসা পেয়ে জিবন ধন্য হয়ে গেল। 
এই বন্দী জীবনে এতো সুখ কোনো দিন পাইনি। 
যানি কোনো দিন তোমাকে কিছু দিতে পারবো না,
তবুও ভালবাসার লোভী হয়ে স্বর্থপরের মত 
তোমার কাছথেকে ভালবাসার সুধা নিচ্ছি।
তোমার ভালবাসার সুধা পান করতে গিয়ে 
সত্যি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। 
এই ভালোবাসা যেনো বন্দি খাচরা পাখির মত,
ছটফট করে আর নিজের অজান্তে গেয়ে উঠে, 
আমি যে আধারে বন্দীনি আমাকে আলো তে ডেকে লও।
এরি মধ্যে সিমান্ত প্রহরী যেনে যায় আমর ভালবাসার কথা, 
বিয়ে নামক বেড়ি পরিয়ে দেয় আমার পায়ে। 
হাজার ও বেড়ির মাঝে সব সময় 
আমার কল্পনায় ঘিড়ে থাকে স্বপ্নলোকের রাজকুমার। 
জলন্ত শিখা বুকে চেপে দিন জাপান করছি। 
কত যে যন্ত্রনার কত যে কষ্টের সেটা বিধাতা ছাড়া কেহ যানে না।
বার বার চেস্টা করি আমি আর একবার সেই রাজকুমারে কাছে যেতে, 
আমার সোনাই এর কাছে যেতে। 
কিন্ত পায়ে যে বিয়ে নামক বেড়ি সেটা পিছন থেকে টেনে ধরে,
আর পারি না সামনে আগাতে। 
স্বপ্ন লোকের দ্বারে মাথা ঠুকে আর কষ্টে পরাজিত মন 
চিৎকার করে সোনাই...... 
আমি তোমাকে ভালবাসি....ভালবাসি.... ভালবাসি..........।।।

গল্প-স্মৃতির প্রেম


লেখক-মাইনুদ্দিন আল আতিক
১৪২০ বঙ্গাব্দ। হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে বিশেষ কোনো কাজে বরিশাল যাচ্ছি বি.আর.টি.সিতে। বাসে আরোহণ করে দেখি আমার পাশের সিটে বসে একলোক ছোট ছোট স্বরে প্রলাপ বকছে আর কাঁদছে। অনুমান করলাম আমার বয়সীই হবে। কিছু না বলে পাশে বসে পরলাম। তাকে বিষণ্ণ ও বিবর্ণ মনে হলো। আমি হা-করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে প্রলাপ বকেই যাচ্ছে। বাসটি এতক্ষণে দুরন্তবেগে ছুটছে তার গন্তব্যে। আর লোকটির চোখ থেকেও অবিরল ধারায় ঝরছে বেদনাশ্রু। আমি আর মূক থাকতে পারছিনা। ভাবলাম জিজ্ঞেস করবো কি হয়েছে তার। কিন্তু! কি বলে শুরু করবো আপনি নাকি তুমি? যেহেতু সমবয়সী সেহেতু তুমি বলাই উচিৎ। হঠাৎ মনে পড়লো একটি প্রবচন, অপরিচিত জনকে "আপনি" বলুন। তাই আপনি বলেই শুরু করলাম।
—কি হয়েছে আপনার?
—কিছুনা
—তাহলে কাঁদছেন ক্যানো?
—কই না তো, এমনেই চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে
—আমি বিশ্বাস করছিনা। আপনার চোখের পানি বলছে হয়তোবা আপনার জীবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। অামার কাছে খুলে বলেন, মনটা হালকা হয়ে যাবে।
লোকটি একটুকরো নিঃশ্বাস ছাড়লো।
—ঠিকাছে যখন শুনতে চান তখন বলছি......
আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের ক্লাসে একটি সুন্দরী মেয়ে ছিলো। বেশ বুদ্ধিমতী ও বিচক্ষণ। পড়াশোনায়ও খুব ভালো। নাম রিতু। তাকে কেনো জানি আমার ভালো লাগতো। তাকে একদিন না দেখলে আমি যেনো উন্মাদ হয়ে যেতাম। তাই বাড়িতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও কখনো ক্লাস মিস করতাম না; শুধু তাকে এক লোচন দেখার জন্য। অনেকদিন তার চোখে আমার চোখ পড়লো। সে চোখের ভাষা বুঝেছিলো। কিন্তু তাকে প্রেমের প্রস্তাব করার মত সাহস আমার ছিলোনা। বন্ধু রাজুকে বললাম ব্যাপারটা। সে পরামর্শ দিলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিতুকে যেনো প্রণয় ফাঁদে বেধে ফেলি। কেননা মেয়েরা নাকি বেশিদিন একা থাকেনা। মাথাটা আমার চক্কর দিয়ে উঠলো। আমি অনেক ভীতু কিনা! বন্ধুকে বললাম ওরে, আমি যে তাকে ভীষণ ভয় পাই। বলতে গেলে যদি গালে চড় মারে? বন্ধু বললো আরে বোকা! যে ছেলেরা মেয়েদের দু’চারটা চড়-থাপ্পড় আর দাবড়ানি খায়নি তারা পুরুষ নাকি? তার কথায় বুকে একটু সাহস পেলাম। মনে মনে ভাবলাম তাও ভালো চড়ের উছিলায় যদি প্রেমটা হয়েই যায়।
একদিন সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম তাকে আমার পছন্দের কথা। সে কি বললো জানেন? আমার ঘাড় ভেঙে ফেলবে। আমি তার কথায় খুব ভয় পেলাম। বাড়ি ফিরে আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেখি আমার একটি মাত্র ঘাড়, আর এটাই যদি ভেঙে ফেলে তবে আমি চলবো কিভাবে?
পরেরদিন ক্লাসে যেতেই সে আমায় স্কুলের ছাদে ডেকে পাঠালো। আমি তো ভয়ে..............................!
মনে হচ্ছে কান থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ভাবলাম কিনা কি! কিন্তু যা ভেবেছিলাম নিতান্তই ঘটলো তার বিপরীত। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
—তুমি কি আমাকে পছন্দ করো?
—......আজ্ঞে...........হ্যাঁ
—ঠিক কি কারণে আমাকে পছন্দ করো, তার প্রমাণ কি? প্রমাণ দর্শাতে পারলে বিবেচনা করবো।
বদনে বলার সাহস না পেয়ে তার হাতে দু'টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিলাম। যা আমি বুদ্ধি করে নিয়ে এসেছিলাম। একটিতে লেখা ছিলো, "আমি তোমার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয়েছি। তোমার ঠোঁটজোড়া যেনো রঙধনু আর মনটা যেনো বিশাল সমুদ্র। তাই তোমাকে আমার.......................।" অপর কাগজটি ছিলো শুধুই শ্বেত।
পরদিন সে শ্বেত কাগজের কারণ জানতে চাইলে বললাম আমার মনটা শ্বেত কাগজের মতোই শাদা। বোধ হয় কাজ হয়েছে ভাবলাম আমি। সে একফালি হাসি দিয়ে ভূপৃষ্ঠে তাকালো আর লাজুকস্বরে বললো, দরখাস্ত কবুল। আমিও তোমায়................ভালোবাসি। বলেই দৌড়ে ক্লাসে গিয়ে ঢুকলো। আর আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার দিকে। এভাবে আস্তেআস্তে অগ্রসর হতে লাগলো আমাদের ভালোবাসার তরণী।
নবম শ্রেণিতে পা রেখেছি তখন। একদিন রিতু আমাকে ডেকে বললো, রিয়াদ ছাদে এসো কথা আছে। সে ছাদে অগ্রসর হলো আর আমি তার অনুগমন করলাম। গিয়ে দাঁড়াতেই সে অশ্রুসিক্ত চোখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তো অবাক! শুধালাম কি হয়েছে তোমার? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, আজ রাতে স্বপ্নে দেখেছি তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছো; তাই আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমাকে ছুঁয়ে পণ করো কখনো আমাকে ভুলবেনা। অবোধ আমি। পণ করলাম, "আমি কখনো তোমাকে ভুলবোনা, তুমি আমার জীবন-মরণ তুমি আমার সব।" সেও আমাকে ছুঁয়ে শপথস্বরে বললো, "তোমাকে ছুঁয়ে শপথ নিলাম তোমারি থাকবো আমি কথা দিলাম।" এভাবে গভীর হতে লাগলো আমাদের প্রেম।
দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে রিতুর কাজিন রিতা কিভাবে যেনো আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলো। সে রিতুর মা-বাবার কাছে বলে দিতেও দ্বিধা করেনি। তারা শুনে তো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বেড়ে গেলো রিতুর উপর শাসনের মাত্রা। অইদিকে টেস্ট পরীক্ষার হাতছানি। কয়েকদিন পরেই পরীক্ষা আরম্ভ হলো। রিতুও এলো পরীক্ষা দিতে। কিন্তু তার চেহারায় দেখা গেলো বেদনাবিধুর ছায়া। জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলেনা, শুধু চোখজোড়া অশ্রুতে টলমল করে। তার বান্ধবী রিমা আমাকে আড়ালে নিয়ে বললো প্রেম করার অপরাধে রিতুকে নাকি তার বাবা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন। আমার টনকনড়ে। আমি অজ্ঞাতসারে রিতুকে নিয়ে ছাদে যাই এবং জেনে নেই তার মনের পরিস্থিতি। জানলেও তখন আমার কিছু করার ছিলোনা। রিতা গোয়েন্দার মতো এগুলো লক্ষ্য করে এবং রিতুর বাবার কাছে নালিশ দেয়। তিনি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে রিতুকে প্রহার করেন এবং আমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য কঠোর তাগিদ দেন। আমার অপরাধ ছিলো গরীব ঘরের ছেলে হওয়া। তারা ছিলো অনেক সম্পদের মালিক। তথাপিও রিতু গোপনে আমার সাথে প্রেম চালিয়ে যায়। কিন্তু রিতা এগুলো সহ্য করতে না পেরে প্রচুর চোখ টাটায় এবং পুনরায় রিতুর বাবাকে জানালে তিনি হেডস্যারের কাছে আমার নামে ইভটেজিং মামলা দায়ের করেন। তখন টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। স্যার তাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ঠিকাছে ব্যাপারটা আমার মাথায় রইলো, এর উপযুক্ত বিচার করবো। কিন্তু হেডস্যার তখন কিছু করেননি।
এস.এস.সি পরীক্ষা চলাকালীন তিনি আমায় স্কুলে ডেকে পাঠান। প্রেম করে আমাকে ইভটেজিং মামলার কাটারায় দাঁড়াতে হলো। বিধাতা কেনো প্রেম প্রেরণ করলেন এই ধরণীতে আর কেনোইবা ধনী-গরীব ভেদাভেদ করলেন? আমি স্যারের কাছে কিছু বলতে চাইলাম।

কিন্তু তিনি আমার কোনো কথাই শুনলেননা বরং বেত্রাঘাত করতঃ রিতুকে ভুলে যেতে বললেন এবং থানায় জানাবেন বলে শাসিয়ে দিলেন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও আমি তাকে ভুলতে পারিনি, পারিনি তার প্রেমকে জলাঞ্জলি দিতে। পরীক্ষা শেষ হলো। দু'জন দু'মেরুতে। অনেকদিন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ নেই। কেনোনা ফোনে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিলোনা। ছিলোনা দেখা করার কোনো পন্থা। যা'হোক কোনো পন্থা খুঁজে না পেয়ে তার বান্ধবীর মাধ্যমে একটা চিরকুট পাঠালাম। যার মূল কথা ছিলো—"তুমি আমার জন্য মাত্র দুটো বছর অপেক্ষা করো, যে করেই হোক দু'বছর পরে তোমাকে আমার সহধর্মিণী করবো।" প্রত্যুত্তরে সে বললো, " তোমার জন্য আমি লাখো বছরও অপেক্ষা করতে পারবো।" কিন্তু সেই আশা কি বিধাতা পূরণ করতে দিলো? দিলোনা। এতো ভালোবেসেও পেলামনা তারে। কয়েকমাস পরেই শুনি তার নাকি বিয়ে হয়েছে অনার্স পড়ুয়া কোনো এক ভদ্রলোকের সাথে। তখন আমি নিরুপায় হয়ে................................... বাস ততক্ষণে তার গন্তব্যে এসে পৌঁছেছে। উভয়েই বাস থেকে নেমে পরলাম এবং দু'জন দু'জনকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে যার যার বাটে চললাম।

Sunday, May 21, 2017

আজীবন ভালবাসা

মোহাম্মদ অংকন
'ভালবাসি তোমায়', ছিল প্রথম বলা 
প্রত্ত্যুরে 'না' শুনব, ছিল মোর অজানা। 
শৈশব অবধি তোমায় রেখেছি আগলে 
ফুলের আঘাতও দেই নি কভু ভূলে। 
কৈশরে তোমায় পাই নি দীর্ঘদিন দেখিতে 
তবে ভালবাসা জমিয়েছি তার বিপরীতে। 
যৌবনের সাক্ষাতে করেছি ভালবাসার নিবেদন 
এখন নাকি ভালবাসা তোমার নিষ্প্রয়োজন। 
তাই যদি হত, পূর্ব সম্মতি কি ভুল? 
যে ভুলে ভালবেসে আমি হারিয়েছি কূল। 
বৃদ্ধকাল অবধি আমি হারাব না তোমার আশা 
তোমার তরে রইবে আমার 'আজীবন ভালবাসা।'

সূর্যভষ্মে মাথা রেখে

সখিনা সুলতানা ঝর্না
সূর্যভষ্মে মাথা রেখে- ঝরে পড়ে নোনা ঘাম 
পর্দার ওপাশে তবু কারা যেন অহর্নিশ আলোর চাবুক হাতে- 
কেড়ে নেয় সমূহ পিপাসা আঠার মতন লেগে থাকে ক্ষয় ও ক্ষতিতে; 
তবুও সভ্যতার থেঁতলানো আঁধারে আমি যেন 
অনুনাদী গন্ধধূপ এক সময়ের ভঙ্গুর গ্রীবায় ঢালি-পুষ্ট ফসলের গান। 
নোনা ঘামে প্রতিদিন জন্ম হয় সভ্যতার সহোদর 
আর নিজেকে আবিষ্কার করি পৃথিবীর যুপকাষ্ঠে হতে পারে 
এ এক আশ্চর্য টোটেমের নাম প্রতিদিন শোধরাতে হয় যার-নির্মিতির দাম ।

Saturday, May 20, 2017

বসন্ত

মোহাম্মদ অংকন
বসন্ত ! বসন্ত ! বসন্ত ! 
তুমি চির যৌবনা,চির প্রাণোবন্ত! 
উদিলে ফাল্গুনী হাওয়া 
তোমারে যায় পাওয়া, 
তুমি যে সদা উদ্দেলিত,সদা জীবন্ত! 
বসন্ত ! 

পাতা যায় ঝোরে,নদী যায় মরে 
তোমারে পাই তবুও ফিরে ফিরে। 
ফোঁটে ফুল বাগিচায় 
ভ্রমকৃষ্ণ পিছন ধাঁয়, 
তুমি যে রুপবতী,অনন্যা,প্রেমাগুনে জলন্ত! 
বসন্ত ! 

প্রিয়জনের আশে চোখ মোর ছলছল 
তোমার আশে কভু হয় নি বিফল। 
কৃষাণের ধান ক্ষেতে 
দেখি তোমায় নাচিতে, 
তুমি অতি চঞ্চল,অতি হর্ষময়ী,ঋতুছন্দে চলন্ত! 
বসন্ত ! 

পূর্ণিমার আলোসহিত জ্বলন্ত তারকালো 
ফাল্গুনী রাতে আমার চোখ জুড়ালো। 
গেয়ে বসন্তের গান 
ফিরে পেলাম প্রাণ, 
তুমি যে প্রাণের সঞ্চারিণী,তুমিই অনন্ত! 
বসন্ত !

Friday, May 19, 2017

পূণ্যদৈর্ঘ্য স্বপ্ন

মোহাম্মদ অংকন
ঘুমাই জাগতিক চিন্তা হতে মুক্ত হতে। 
যখন ঘুমাই স্বাপনিক একটা জগৎ চলে আসে। 
মনে হয়, কাল হতে কাল রাত হতে রাত স্বপ্ন দেখছি; 
যখনই স্বপ্ন ভাঙ্গে যখনই ঘুম ভাঙ্গে 
যখনই জেগে উঠি মনে হয়,
 এ এক স্বল্প স্বপ্ন ছিল। 
আবার ঘুমিয়ে পড়ি স্বচ্ছ স্বপ্নের আশায়, 
ঘুম আসে না আবার জাগতিক চিন্তা শুরু হয়। 
মনে হয়, পৃথিবীর সব দায়িত্ব 
আমার সব কাজ আমার সব ব্যর্থতা 
আমার জন্য আমিই একমাত্র নগণ্য; 
এক চোখের কোণে জল আসে আর্দ্রতা মাখা, 
যখন ঘুম আসে না যখন ঘুমাতে পারি না আর্দ্র চোখ মেলে ধরি, 
না রাত না সকাল ঘড়ির কাটা হয়ত থেমেছিল মনে হয়, 
আমার স্বপ্নের পসরা গুণতে ঘুমের ঘোরে 
প্রলাপ শুনতে এদিক ওদিক গড়াগড়ি দেখতে। 
আবার ঘুমাই ঘুমে বিভোর স্বপ্ন আর আসে না; 
অতঃপর বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় জানালা খুলে দেখি- 
শহরের ব্যস্ততা বেড়েছে মানুষ কর্মে ছুটছে। 
আমিও কর্মে ছুটব ভেবে যখনই শার্ট পড়ি যখনই টাই পড়ি 
যখনই জুতার ফিতা বাধি কে যেন হাত ধরে 
থামিয়ে দেয় কষ্টদায়ক কথাটি বলে- 
' তুইতো বেকার।' 
তখন ভাবি, পৃথিবীতে আমার কোনো দায়িত্ব নেই 
আমার কোনো কাজ নেই কর্ম নেই ব্যর্থতা কিসের? 
বেকার,তুমিই উত্তম! 
খাও ঘুমাও আর পূণ্যদৈর্ঘ্য স্বপ্ন দেখ।

তৃষ্ণার্ত

কবি-অনামিকা ভূঞা
আমি পিপাসিত প্রাণ 
                 এদিক সেদিক খুঁজে ফিরি 
                            সামান্যতম জলের নিশান। 
না,না জল আমি চাই না 
                          আমার বেড়েছে মনের ক্ষুধা 
                                            হেরিতে তোমার মুখখালি কোমল 
                                                          সে যে আমার অমৃতের সুধা। 
ক্ষুধা,তৃষ্ণা ভুলে যাবো 
                       মুছে যাবে হিয়ার যাতনা সব। 
                                     বিভোর হবো তোমার অভয়বে 
                                                   সুখের পাখি মনে করবে কলরব। 
অপলক মায়াবী চাহুনী তোমার 
              কোমল তোমার হৃদয় খানি 
                                  মুখে ভাঁসে প্রেমের কাব্য শত কন্ঠে 
                                         তোমার ধ্বনিত সূরবানী। 
অষ্ট প্রহর কেটে যাবে যাক না 
                        আমি তোমার ঐশ্যর্যে থাকি মোহিত 
                                বিধাতার অপূর্ব এক সৃষ্টি তুমি 
                                               অশেষ বৈভবে তুমি সু-শোভিত। 
যত ক্ষুধা আর পিপাসা আমার মিটবে না 
                      সামান্য অন্ন জলে পাবো তোমায় কোন সুদূরে, 
                        কোন সে মহান কর্ম ফলে???

কবিতার চিতা

কবি-সাদিয়া সিদ্দিকা
পরপর কয়েকশো কবিতা চিতায় জ্বেলে দিয়েছিলাম 
কবিতার মষ্তিষ্ক গলে গিয়েছিল, 
অক্ষরগুলো বজ্রপাতের আঘাতেও বজ্রকাষ্ঠিত হয়নি 
কবিতার তেজ বজ্রের তেজের চেয়ে বেশী ছিল বলে! 
পৃষ্ঠার মাঝে কেবলই আত্মকথন,
কবিতার দুয়ারে রাঙা রাঙা শব্দগুচ্ছ মৃত্তিকার জ্বলন্ত 
কাব্যে নিশিকর ভাবে চলন্ত দিগন্ত,
পৃথিবীর মাঝে আজ আড়ম্বরতা! 
প্রকৃতির স্তনে ইন্দ্রধনুর রেখায় স্তব্ধময় রেশারেশী চলছে,
একটা বানান ভুল হয়েও আজ কবিতার পাতায় নির্ভুলতা!! 
লক্ষিন্দরের স্মার্নান্দীনি আজ অতল গহ্বরে 
লুকিয়ে আছে যোজন বিয়োজনের স্পৃহায়! 
ও জলে পা ডুবিও না!ও জলে কবিতার ঘ্রান নেই,
আছে শীতল করার তীব্র যন্ত্রনা! 
নতজানু হয়ে সহস্র বছরের বিনিদ্রিত রাত আজ 
শিরনামহীন হয়ে রাজপথে নেমেছে শীরনাম হতে, 
ও শহরে যেও না!
ও শহরের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে সতন্ত্রময়ী ঘৃণাময় কাব্য! 
জলাঙ্গিনীর পুড়ে ফেলা কাব্য আবার প্রান পেল বলে,
ব্রক্ষ্মান্ড কৃতার্থ হয়নি। 
কবিতার শেষ মলাটে ধুলো জমে গিয়েছে,
ধুলোর শৈল্পিকতায় কবিতাদের মৃতদেহ চিতাশালায় পুড়ে যাক! 
ও শহরে কেউ যেও না,
ও শহরে কবিতাদের চিতা পুড়ানো হয়!
কবিতার চিতায় তীব্র গুমোট গন্ধ! 
কবিতার চিতায় কবিতাদের মষ্তিষ্ক গলে গিয়েছে,
কবিতার চিতায় আজ কবিতার মৃতদেহ চাপা পরে আছে!

Thursday, May 18, 2017

অভিযোগবিহীন

কবি-সামিয়া শ্রাবণ
চলো, শব্দহীন কান্না হয়ে লেপ্টে থাকি --
আমাদের খানিকটা স্মৃতিতে। 
বিনিয়োগহীনতায় কেটে যাক 
তোমারও খানিকটা সময়। 
অশ্রু হয়ে লেগে থাকুক--
খানিকটা দীর্ঘশ্বাস! ভয় নেই---
আমি তো আছি.....! 
অভিযোগবিহীন স্মৃতিরা যেমন থাকে বৈকুন্ঠে-- 
নিঃশব্দে বয়ে চলা অভিযোগবিহীন গাঙচিলদের মতন....!!

আজও ফিরলেনা

কবি-মাইনুদ্দিন আল আতিক
 
প্রতিক্ষার প্রহর গুনি
তালগাছের মত একপায়ে দাঁড়িয়ে;
মাথায় বাবুই পাখির বাসা,
শরীরে অমসৃণ বাকলের জটলা,
পাথরের টুকরোর মত নিষ্পলক দুটো চোখ।
ঝাঁপসা অন্ধকারে কেটে যায় দিন-মাস-বছর
বিরহ তাপ সয়ে সয়ে বেলা অবেলায়।
.
বলেছিলে শীতের রিক্ততা কাটলেই
বসন্তের গানে গানে ফিরবে,
আলোকবর্ষ দূরত্ব অতিক্রম করে
ভালোবাসার মিলন নীড়ে।
কত কত বসন্ত কেটে গেলো
তবু আজও ফিরে এলেনা তুমি
এই কাঙাল আঙিনায়।

পেতে হলে কাছে যেতে হয়

সখিনা সুলতানা ঝর্ণা
ইচ্ছেগুলো কেঁপেছিল। হয়ে গেল ঘন-গূঢ় স্থির 
দূরত্ব বঞ্চনাদাহ বেদনা ও ব্যর্থতার ভেতর 
দ্বন্দ্বের ক্রন্দন থাকে। সেও ভালো আগুনের কাছে 
নবীন অরণ্য লেখে অনলস মেঘের সনেট কুঠারের শব্দ নেই, 
উচ্চ হয় সবুজের গান তখনি বলতে হয় - 
'গোষ্ঠীচক্ষু সৌন্দযের্র চেয়ে খুঁজে মরে মৃত্যুঘ্রাণ, 
কারা তবে আত্মহত্যাকামী?' ইচ্ছেগুলো কেঁপেছিল। 
হয়ে গেছে ঘন-গূঢ় স্থির বিষণ্ন স্পর্ধার কাছে, 
স্পষ্ট রিক্ত মগ্নতার কাছে ফিরে যেতে দ্বিধা নেই।
তবুতো ফেরা হলো ঘরে... 
শুরুতে শূন্যতা থাকে, যেতে যেতে যথেষ্ট ভরাট আগুনের কুণ্ড হোক, 
হোক না সে বরফের চাঁই দূরত্বে পাবে না তাকে, 
পেতে হলে কাছে যেতে হয়।

তুমি আর আসবে না

মোহাম্মদ অংকন
ভাল লাগছে না, এই ভেবে, তুমি আর আসবে না, 
তুমি না আসলে আমি এসে কি করব? 
একা একা প্রহর গোনার চেয়ে মৃত্যু ঢের ভাল। 
তুমি যখন ছিলে না, তখন অন্যরকম ছিলাম, 
ভাবনার জগৎ ছিল না, একা মানুষ আমি, 
তোমার পদচারণায় মূখরিত হল আমার তরুণ প্রাণ। 
সুখের প্রণোদনা পেয়ে র্দীর্ঘদিন বাঁচার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম, 
হয়তো আর কিছুকাল তুমি আমি গল্প করতাম হাটতাম বাঁকা নদীর তীরে, 
খোলা মাঠে, লোকে লোকারণ্য হাটে, শিশুদের পাঠশালায়, 
যেতাম কোনো আশ্রমে, কোন এক সুখী সম্পতির পরিবারে। 
অনেক পথ হেঁটেছি, কভু ক্লান্ত আসে নি, 
ঠায় বসে থেকেছি অপেক্ষায়, জানতাম আসবে। 
এখন আসবে না আর এই ভেবে পা দুটো চলে না পথকে অনেক দুর লাগে, 
অচেনা লাগে শহর, মনে হয়, নদীর তীর নেই, মাঠে ফসল নেই, 
পাঠশালা হয়তো বন্ধ, সুখী দম্পতি অনাহারে আছে, 
যেমনটা আমি তোমার না আসার সংবাদে- 
ছেড়ে দিয়েছি আহার, প্রত্যুষ কবিতা লেখা। 
জীবনের রুটিন কমিয়ে আনতে চাই, 
তোমার অনুপস্তিতে আমি যেন ভিনগ্রহের জানোয়ারে পরিণত হয়েছি, 
যদি শেষবারের মত আসতে, দেখতে বর্তমান হালচাল, 
ফিরে যাব না বলে পাশে থাকতে চিরকাল, 
এই আমায় ভালবেসে।।

Wednesday, May 17, 2017

হলুদ চোখ

মাহমুদুল ইসলাম
অপরূপ সে চোখ, শালিকের হলুদ দুটি চোখ 
ঘুমিমে আছে যেন আমার স্বপ্ন কাননে, 
রাস্তার মোড়ে মোড়ে সবুজ গাছের ফাঁকে 
এমনকি আনন্দ আবেগ সব খানে দুটি চোখ, 
শালিকের হলুদ দুটি চোখ। 
কি সরল সে চোখ ছাই রাঙা দেহের মাঝে মনে হয় 
প্রিয়ার প্রেম মিশে হলুদ রঙের সাজে। 
 নেমন্ত্রণ তোমায় প্রিয়ো চোখ, শালিকের হলুদ দুটি চোখ। 
তুমি বারে বারে এসো আমার স্বপ্নলোকে আমার অবসরে, 
ঘুমের আরমোরায়, এসো আমার খোলা জানালায় 
এসো তুমি হলুদ চোখ।

তুমি আর আমাকে ভালবাস না

মোহাম্মদ অংকন
'তুমি আর আসবে না' বলেও এসেছিলে আজ, 
দীর্ঘ অবধি খোসগল্পে মেতেছিলে একবারও স্মরণ করনি 
এই আমাকে যে তোমাকে বসন্ত অবধি ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়েছে। 
আজ তারাই তোমার প্রেক্ষাগৃহে স্থান পেল, 
যারা তোমার বিরুদ্ধাচারণ করেছে, 
অথচ বৃথা হল আমার নিরলস ভাবনা। 
শেষ বসন্তেও যখন একা ছিলে,আমায় করেছ অনুভব 
তোমার অনুভবের তাড়নায় দুরে থাকতে পারিনি, 
দুজনের জীবনের গল্প মিলিয়েছি, 
স্বপ্ন দেখেছি যুগলবন্দী হয়ে বাঁচার। 
আজ যখন আমাকে ছাড়া আড্ডার পসরা সাজিয়েছ, 
তখন আমি ভালবাসার গল্প লেখা বন্ধ করেছি। 
সে দিনের স্মৃতি তোমার মনে নেই,কিন্তু আমার আছে, 
ভালবাসার প্রত্যক্ষদর্শী রাখতে চেয়েছিলে, আমি বলেছিলাম,'তুমি আমার প্রমাণ।' 
আর আজ কি হল?আসবে না বলেও এলে, 
অন্যের হাত ধরে,আমার প্রতিশ্রুতির ভালবাসা বিনাশ করে, 
বুঝতে বাঁকি থাকল না,'তুমি আর আমাকে ভালবাস না।'

Monday, May 15, 2017

ঠোঁট দিয়ে দায় মোছে

আবুল কালাম আজাদ
দুইটি প্রাণীই ক্ষুধার্ত, টিকটিক টিক প্রাণ আছে, 
একটি খাবে আরেকটিকে, তার মনেতে তান আছে । 
অসহায়টির এক স্বজাত 
সভ্যরূপী কী বজ্জাত ! 
চকচকে তার পাশব চোখ, লকলকে জিভ লটকাছে ! 
বিবেক করে বলাৎকার 
তুললো ছবি চমৎকার ! 
শক্তিশালী ক্যামেরা আর লোভ মোড়ানো প্রাণ আছে । 
কোট,টাই আর পায়ে বুট-- 
বিশ্ব তাকেই দেয় স্যালুট ! 
ছবিতেই যে ধ্বংস হওয়া মানবতার গান আছে ! 
 সোমালিয়া , মিয়ানমার -- 
এমন হাজার বেশুমার 
ছবির ধারক নায়ক সেজে নোংরামনেে আলগোছে 
শিয়াল, শকুন তোষণ করে ঠোঁট দিয়ে হায় দায় মোছে !!