লেখক-ফাতেমা জাহান লুবনা
বিজয়া মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে । উচ্চবিত্ত পরিবারের মতো
জীবনের উপকরণ অনেক না থাকলেও তাদের পরিবার যেন ছিল চাঁদের হাট।স্কুলের পর
বাসায় ভাইবোনদের সাথে আনন্দঘন সময় কাটত।স্কুলে কোথায় কি হয়েছে মজার কোন
ঘটনা ক্লাসের বা ক্লাসের বাইরের সব কিছুই ভাইবোনের সাথে শেয়ার করে হাসি
আনন্দে মেতে উঠত।এরপর বিকালের সময়টা বান্ধবীদের সাথে শৈশবে এককা
দোককা,চুরি ভাঙা, বৌচি ,গোল্লাছুট,ব্যাডমিন্টন খেলে পার হয়ে যেত।আর কৈশোরে
পাড়ার বান্ধবীদের সাথে এমনকি বয়সের বড় আপুদের সাথেও গল্প আড্ডা আর সেই
সাথে হাঁটাহাটি করে বিকালটা পার করে দিত।তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে
গিয়েছিল একটা নদী ।নদীর দুপারে শ্যামল মাঠ আর নদীর উপরে সেতু সব মিলিয়ে
যেন স্বপ্নে আঁকা কোন ছবি ।বিজয়া খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ত এরপর
কোরআন শরীফ পড়ে বান্ধবীদের সাথে নদীর পারে প্রাত ভ্রমণে বের হত।সকাল
বেলাটা তার সাধারণত তিথির সাথে হাঁটা হত।আধা ঘন্টা হেঁটে এসে ঘরে পড়তে বসত।এরপর নাস্তা করে স্কুলের পথ ধরত।একদিন তিথি হাঁটতে বের হল না তার ঠাণ্ডা লেগেছেল।একাই হাঁটতে গেল বিজয়া।
বেলাটা তার সাধারণত তিথির সাথে হাঁটা হত।আধা ঘন্টা হেঁটে এসে ঘরে পড়তে বসত।এরপর নাস্তা করে স্কুলের পথ ধরত।একদিন তিথি হাঁটতে বের হল না তার ঠাণ্ডা লেগেছেল।একাই হাঁটতে গেল বিজয়া।
পিছে থেকে তাকে অনুসরণ করছিল
জহির নামে এক ছেলে ।সে তার বয়সে বছর খানিকের বড় হবে ।একক্লাস উপরে
লেখাপড়া করত ।পড়াশোনায় বেশ ভালো ।বিজয়া বেশ বুঝতে পারত ছেলেটি তাকে অনেক
পছন্দ করে ।তবে সে এগুলো ওত পাত্তা দিত না।কারণ তার ইচ্ছা ছিল আগে নিজের
জীবনটা গুছিয়ে নিবে।যাহোক নদীর ধারে তাকে একলা পেয়ে জহির সাহস সঞ্চার করে
বিজয়ার সামনে আসে।বলে :তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ।
বিজয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ।তবে দৃঢ়তার সাথে উত্তর দেয় :আপনার কোন কথা থাকলে সেটা বাসায় গিয়ে বলবেন ভাইয়া ।
এই কথা বলেই বিজয়া দ্রুত পদে বাড়ি ফিরে আসে।এরপর থেকে সে আর সকালে একা একা হাঁটতে বের হয়নি।
পরমা সুন্দরী নয় বিজয়া এটা সে বেশ জানে ।তবু ও তার পিছে এখানে সেখানে কেন যে লোক লাগে সেটাই সে বুঝতে পারে না।আসলে কাউকে ঠকানোর পক্ষপাতী সে ছিল না।
শৈশবকাল থেকে একটা চেহারা তার মনের মাঝে গাঁথা ছিল ।ফর্সা উজ্জ্বল চেহারা ,নাকটা কিছুটা লম্বাটে ধরণের, উচ্চতা মোটামুটি লম্বা, কন্ঠস্বর পুরুষালি দৃঢ়তা বিশিষ্ট ।সে হবে কোন এলাকার রাজার মতো ।এমন কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সহ হুবহু এক প্রতিকৃতি তার হৃদয় জুড়ে বসানো ছিল ।মনে মনে খুঁজতে থাকত বিজয়া তার স্বপ্নের রাজপুত্রকে।কিন্তু হায় কোথাও সে খুঁজে পেত না তাকে।এক আত্মীয়ের সাথে সেই চেহারার কিছু মিল ছিল বটে তবে হৃদয় পটে আঁকা ছেলেটির সাথে উচ্চতায় মিল হয় না।তাই সে বুঝতে পারে সে তার দেখা আজও পায় নি।
বিজয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ।তবে দৃঢ়তার সাথে উত্তর দেয় :আপনার কোন কথা থাকলে সেটা বাসায় গিয়ে বলবেন ভাইয়া ।
এই কথা বলেই বিজয়া দ্রুত পদে বাড়ি ফিরে আসে।এরপর থেকে সে আর সকালে একা একা হাঁটতে বের হয়নি।
পরমা সুন্দরী নয় বিজয়া এটা সে বেশ জানে ।তবু ও তার পিছে এখানে সেখানে কেন যে লোক লাগে সেটাই সে বুঝতে পারে না।আসলে কাউকে ঠকানোর পক্ষপাতী সে ছিল না।
শৈশবকাল থেকে একটা চেহারা তার মনের মাঝে গাঁথা ছিল ।ফর্সা উজ্জ্বল চেহারা ,নাকটা কিছুটা লম্বাটে ধরণের, উচ্চতা মোটামুটি লম্বা, কন্ঠস্বর পুরুষালি দৃঢ়তা বিশিষ্ট ।সে হবে কোন এলাকার রাজার মতো ।এমন কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সহ হুবহু এক প্রতিকৃতি তার হৃদয় জুড়ে বসানো ছিল ।মনে মনে খুঁজতে থাকত বিজয়া তার স্বপ্নের রাজপুত্রকে।কিন্তু হায় কোথাও সে খুঁজে পেত না তাকে।এক আত্মীয়ের সাথে সেই চেহারার কিছু মিল ছিল বটে তবে হৃদয় পটে আঁকা ছেলেটির সাথে উচ্চতায় মিল হয় না।তাই সে বুঝতে পারে সে তার দেখা আজও পায় নি।
এক সকালে ঝড়ের গতিতেই প্রায় তার যাওয়া হয় সাগরিকার সাথে এক স্যারের
বাসায় ।সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার মতো বিলাসিতা তার সাজে না এটা সে ঠিকই
জানত।তবু বিজয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সাগরিকা তাকে হাত ধরে প্রায় জোর করেই
নিয়ে চলে এক প্রাইভেট কোচিংয়ে ।একদিন না হয় আস আমাদের সাথে।ভালো লাগলে
আমি পড়ব আর না লাগলে আর যাব না ।এমন এক বায়না ধরে বিজয়াকে নিয়ে হাজির সেই
শিক্ষকের গৃহে।সেখানে গিয়ে কিছুটা সময় সে থাকে ।হঠাৎ বিজয়ার দৃষ্টি
একদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় ।সেই কণ্ঠস্বর, সেই উচ্চতা,সেই নাক,সেই
চেহারা ।স্কুলের সেরা ছাত্র পলাশ নামের ছেলেটি ও আড়চোখে তার দিকে
তাকায়।বিজয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে আনে।এরপর থেকে বিজয়া যত শুনে পলাশের কথা
ততই অবাক হতে থাকে ।ছোটকাল থেকে স্রষ্টার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল ।তাই
সে ভেবে নেয় এই ছেলেই একদিন তার বর হবে যেহেতু তাকে দেখার পূর্ব হতেই
স্রষ্টা তার হৃদয়ের গহীনে তার ছবি এঁকে দিয়েছিলেন নিজ হস্তে।
বিজয়া প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী ছিল না কোন কালেই ।কারণ সে মনে
করত এতে স্রষ্টার সীমানা অতিক্রম করা হয় ।তবু কেন সে নিজেকে ধরে রাখতে
পারছিল না! চোখের পানি কেন বাঁধ মানত না!প্রবাহিত নদীর মতো মানুষের
অক্ষিপটও মাঝেমধ্যে প্রবাহমান হয়ে যায় ।
পলাশ বিজয়ার বিষয়টি টের
পেয়ে বেশ কঠোরতা প্রদর্শন করে ।আসলে সে তার ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন
ছিল।তাই বিজয়াকে এক বন্ধুর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় আসলে বিজয়া তার যোগ্যই নয়
।সেই দিন বিজয়া অনেক কেঁদেছে।আকাশের মেঘগুলো তার মুখকে আচ্ছন্ন করে রাখত আর
লজ্জায় পা গুটিয়ে আসত।তবু সে ভাবত আজ সে যাই বলুক না কেন কাল সে ভুল
বুঝতে পারবে ।সে তাকে ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করতে পারত না।
স্কুলের
গন্ডি পার হয়ে কলেজে উঠেছে বিজয়া ।স্কুল জীবনের হাসি আনন্দ, দুঃখ -বেদনার
স্মৃতিগুলি চিরকাল অম্লান থাকে মানুষের জীবনে ।কলেজ জীবনটা যেন ঝড়ের বেগে
পার হয়ে যায় ।সময় অল্প আর অধিক পড়াশোনার চাপের সাথে অনেক ছাত্রছাত্রী
তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে ফলাফল আশানুরূপ করতে পারে না।তবে শিক্ষকদের
পরিপূর্ণ সহযোগিতা বিষয়কে সহজ করে দেয়।বিজয়া এমন অনেক শিক্ষকদের পেয়েছে
স্কুল জীবনে।কলেজে ও পেয়েছিল কিছু গুণীজন।তাদের মাঝে অন্যতম ছিলেন বাংলার
শিক্ষিকা যিনি বিজয়াকে ছোট বোনের মতোই স্নেহ করতেন ।কলেজ জীবনে তার স্নেহ
বিজয়ার জীবনে পরম প্রাপ্তি ছিল যা স্রষ্টার আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছু হতে
পারে না।ধনীর দুলালী হওয়া সত্তেও তার নিরহঙ্কার চিত্ত আর স্নেহমাখা কন্ঠ
বিজয়াকে আকৃষ্ট করত।তিনি মেডাম বললে মন খারাপ করতেন, আপা বলাটাকেই পছন্দ
করতেন ।কলেজের শেষ পরীক্ষার আগের কিছু দিন ক্লাস বন্ধ থাকে ।তখন বাংলা
শিক্ষিকা বিজয়ার কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে তার বাসায় প্রস্তুতিমূলক
পরীক্ষার জন্য আসতে বলতেন যা ছিল তার মহৎ হৃদয়ের ভিন্ন এক বহিপ্রর্কাশ
।কলেজ পরীক্ষাও শেষ হয়ে এল।একদিন বিজয়াকে বাংলা শিক্ষিকা বাসায় আসতে
বললেন ।বিজয়া সাগরিকাকে নিয়ে তার বাসায় হাজির হয়।বিভিন্ন কথার প্রসঙ্গে
বাংলা শিক্ষিকা বিজয়ার কাছে জানতে চান :তুমি কি কাউকে ভালোবাস?বিজয়া মিথ্যে
বলতে অভ্যস্ত নয় আর বাংলা শিক্ষিকার কাছে তো একদমই নয়।সে লজ্জা জড়ানো
কন্ঠে পলাশের কথাটা জানায় আর সেই সাথে যোগ্যতার কারণে প্রত্যাক্ষিত হবার
বিষয়টাও।বাংলা শিক্ষিকা তাকে কিছু কথা বলেন যেগুলো তার মানসপটে আজীবন
অম্লান হয়ে থাকে ।তিনি বলেন :"যে তোমাকে ভালোবাসবে সে কখনওই তোমার
যোগ্যতার দিকে তাকাবে না আর যে তোমার যোগ্যতার দিকে তাকায় সে তোমাকে
ভালোবাসে না।অর্থ -বিত্ত, টাকা- পয়সা ,রূপ-লাবণ্য, সার্টিফিকেট দেখে কাউকে
পছন্দ করাকে শর্ত বা condition বলে ।ভালোবাসা এতকিছু বিচার করে হয়
না;ভালোবাসা হয় মনের বিচারে।"সেই দিনের সেই কথাগুলো বেশ দাগ কাটে তার
হৃদয়ে।
তার বেশ কিছুদিন পরে কোন এক সকালে বিজয়া হাজির হয় পলাশের
বাসায় ।বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসে । বিজয়া শেষবারের মতো জানতে চায়
আসলে পলাশ কি তাকে সত্যিই ভালোবাসে না!বিজয়ার অপর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী
অপরাজিতা পলাশকে প্রশ্ন করে ।পলাশের উত্তর একবাক্যে :"আমার যা বলার তা তো
আমি আগেই বলে দিয়েছি" বিজয়া বলে :"চলে আয় অপরাজিতা ।ওর সাথে আমার আর কোন
কথাই নেই ।"
বিজয়ার বাবা মা তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে ঠিক
করেছেন ।এতকিছুর পরে আর বিয়ের ক্ষেত্রে বাধ সাধার মতো মানসিক মনোবল তার
যেন হারিয়ে গেছে।তবুও সে বিয়ের আয়োজন ভাবছে মিথ্যে কোন গল্প ।শেষ পর্যন্ত
হয়তোবা এমন কিছু ঘটবে যে তার আর অন্য কোথাও বিয়ে হবে না।সে জানত একদিন
পলাশের সব থাকবে আবার কিছুই থাকবে না।তার হৃদয়ে যার ছবি স্রষ্টা এঁকে
দিয়েছেন সেই হৃদয়টাও তার ছবি শূণ্য হয় কি করে? তাই তার ঐ পাথরের মতো
ব্যক্তিত্বের অভ্যন্তরেও একদিন কান্নার নদী বয়ে যাবে তবে তা দেখার মতো কেউ
থাকবে না। সত্যি সত্যি পাত্র পক্ষ চলে আসল এক বৃষ্টি ভেজা রাতে।হৃদয়ের সব
কথা হৃদয়ে মাটি দিয়ে সে ভাবল এটাই তার জীবনের পরীক্ষা ।তাকে জয়যুক্ত হতেই
হবে ।কর্তব্য আর কর্মের জগতের মাধ্যমে জীবনের বাকি দিনগুলো না হয় এভাবেই
কেটে যাবে ।আর হৃদয়ে আঁকা ছবির প্রসঙ্গ? সেটারও নিশ্চয়ই কারণ আছে।মহান
আল্লাহ্ বিশ্ব জগতের কোন কিছুই কারণ ব্যতিরেকে ঘটান না আর মানুষের ইহকালই
জীবনের পরিসমাপ্তি নয়।
No comments:
Post a Comment