লেখক-আবু সাহেদ সরকার
পরীা শেষ। আমার বাবাকে বলে, আমি আমার দাদিবাড়ি মহিমাগঞ্জে আসি। দাদিবাড়ি অন্য সব বাড়ি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পেছনে জঙ্গলবেষ্টিত। দাদিরাসহ মোট ১৫-২০টি পরিবারের বসবাস। আমার চাচারা সবাই এখানে থাকেন। দাদি রাতে আমাকে শোয়ার রুমে রেখে নিজের রুমে চলে গেলেন। পরের দিন রাতের ঘটনা...আমার মোটেও ঘুম আসছিল না। মধ্যরাত প্রায়। বিদ্যুৎ কিছুণ আগে চলে গেছে। নিস্তব্ধ রাত। জানালাটা এখনও খোলা রয়েছে। হঠাৎ কী যেন একটা বিকট আওয়াজ আমার কানে এসে আঘাত করল। আমার বুক দুর দুর করে কেঁপে উঠল ঠিকই, কিন্তু কী সব এলোমেলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়লাম। এত বড় আওয়াজ আমি আগে কখনও শুনিনি। পাশের টেবিলের ড্রয়ারে রাখা টর্চলাইটটা বাইর করে দরজার দিকে মারলাম। দেখি দরজাও ঠিকঠাক রয়েছে। পাশের রুমের আমার চাচাতো ভাই রাকিবকে ডাক দিলাম। কোনো আওয়াজ পেলাম না। আমার মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা আসতে শুরু করল। নিজেকে নিজে ভাবতে শুরু করলাম। আসলে আমি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তব। ডান হাত দিয়ে কানে চিমটি বসিয়ে দিলাম। ইশ! চিমটিটা সত্যিই আমার কানে লেগেছে। আমার শরীর আরও হিম হতে লাগল। আমার রুমের ডান কোনায় একটা অলৌকিক ছায়ামূর্তির মতো দেখা গেল। ছায়াটি ক্রমেই আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। আমি তখনও ওই ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার শরীর শিউরে উঠল। ছায়াটি দেখতে মানুষের কি পশুর তা নির্ণয় করতে পারছি না। মনে হলো হয়তো কেউ এসেছে। আমি আবারও ডাক দিলাম রাকিবের নাম ধরে। কিন্তু কই! কোনো আওয়াজ পেলাম না। চোখ আড়াল হতেই দেখি, ছায়াটি তার জায়গায় আর নেই। ভোর হতে না হতেই দরজাটি ঠকঠক আওয়াজ করল। প্রথমে আমি স্থির হলাম। তারপর ঠিক করলাম এবার পরীা করা যাক, আসলে মানুষ না অন্য কিছু। তখনও পরপর আওয়াজ করেই চলেছে। দরজার নিচের দিকে তাকালাম। কিন্তু পায়ের মতো কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরপর তিন থেকে চারবার শব্দ হওয়ার পর গলার আওয়াজ পেলাম আমার দাদির। দরজা খুলে আমার দেখা সব ঘটনা দাদিকে খুলে বললাম। দাদি একটু মুচকি হাসি হেসে অতীতের সব ঘটনা লুকানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু আমার জানার আগ্রহ দেখে দাদি অতীতের সব ঘটনা আমাকে খুলে বললেন। দাদি বললেন, প্রায় ১০০ বছর আগে এই বাড়িতে কোনো বাড়িঘর ছিল না। ঝাউজঙ্গল ভরা একটা বনের মতো ছিল। ভূতের বসবাস ছিল এখানে। বর্তমান বাড়িঘর হওয়ায় তাদের আবাসস্থল ভেঙে যায়। তাই তারা নতুন কোনো মানুষের আগমন দেখলেই বিভিন্ন আঙ্গিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনো তি করে না। আমি যখন প্রথমে এই বাড়িতে আসি, তখন ওরা আমাকেও ছায়ামূর্তি, কুকুর, বিড়াল, বউ হয়ে ভয় দেখায়। এ রকম করে তোর মাকেও ভয় দেখিয়েছিল। সে জন্য তোর মা আমাদের রেখে শহরে গিয়ে বাসা করে। সব শুনে আমি মনে কোনো ভয় না রেখে সকালের নাশতা সেরে মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনে এসে ট্রেন ধরে শহরের দিকে রওনা হলাম।
No comments:
Post a Comment